জমির সেচ কৃষির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেচের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হয়। কৃষি উৎপাদন ও কৃষিতে ব্যাঘাত ঘটার অন্যতম প্রধান কারণ সেচ সংকট। এতে অনেক কৃষক হয় জমি অনাবাদি রেখে দেয় বা অতিরিক্ত খরচে চাষ করে। সরকার কর্তৃক সেচ ব্যবস্থা স্থাপন করা হলেও সেগুলো নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় রাজনীতিসহ নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
সেচ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় কৃষকরা সমস্যায় পড়ছেন। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার পর ফসলের ন্যায্য দাম না পেলে আশঙ্কা আছে অনেক কৃষকই চাষাবাদ ছেড়ে দিচ্ছেন। এটি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। বিকল্প হিসেবে বাড়তি খরচের বোঝা ভোক্তাদের ওপর যাওয়াও একই ধরনের ভয়াবহ বিষয়। করোনা মহামারির পর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। ইতোমধ্যে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শহরাঞ্চলে যাওয়া সবজিসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর দামও বাড়তি। আমরা এখন যা দেখছি, তা সংকটাপন্ন জীবনের থেকে কম কিছু নয় এবং এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। দেশের কৃষককে প্রায়ই চাষাবাদের পানির জন্য হাপিত্যেশ করতে হয়। এ বছরও পানির জন্য তাদের হাহাকার করতে দেখা যাচ্ছে। পানির চাহিদা পূরণে তাদের সামনে বিকল্প হচ্ছে সেচ; কিন্তু সেখানেও দেখা দিয়েছে সংকট। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। সেচের জন্য কৃষকরা যে বিদ্যুতের ওপর ভরসা করবে তাতেও রয়েছে সমস্যা। নানান সমস্যায় কৃষকরা এমনিতেই জর্জরিত। তার ওপর তাদের চাষাবাদের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায়ই ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও কৃষক তার সাধ্যমতো ফসল ফলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে- সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা এ সময় কৃষকদের কতটুকু সহায়তা করছে।
এ সময় তো তাদের উৎসাহী হয়ে কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী সেচ বোরিং লাইসেন্স দেওয়া উচিত; কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কৃষকদের এ হয়রানির অবসান ঘটানো হোক। কৃষকদের প্রতি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হলে তার বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং কৃষকের চাষাবাদের কাজে সব ধরনের বাধা দূর করা অত্যন্ত জরুরি। কৃষককে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা ও সার্বিক সহায়তা বাড়াতে হবে।
উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয় সেক্ষেত্রে আগে থেকেই নীতি গ্রহণ করা জরুরি। আমাদের ধান উৎপাদন অনেক বেড়েছে। গত বছরও খুব ভালো ফলন হয়েছে। এটা ধরে রাখতে হবে।’ কৃষকদের বাঁচাতে সরকারকে অবশ্যই আরও জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।